সেরা ৫টি প্রবন্ধ রচনা সপ্তম শ্রেণীর জন্য। Top 5 Probondho Rochona Suggestions Answers

0

চন্দ্রালোকিত রাত, ঝড়ের রাত, শীতের দুপুর , অরণ্য ভ্রমণ, গ্রামে ভ্রমণ - প্রবন্ধ রচনা 

সেরা ৫টি প্রবন্ধ রচনা সপ্তম শ্রেণীর জন্য। Top 5 Probondho Rochona Suggestions Answers


নমস্কার বন্ধুরা, আশা করি তোমরা সবাই ভালো আছো। আজ Info Educations ওয়েবসাইটে তোমরা পাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাংলা প্রবন্ধ রচনার উত্তর। এখানে প্রকাশিত প্রবন্ধ রচনাগুলি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে। বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়মিত অনুশীলন করলে পরীক্ষায় লিখতে সুবিধা হয় এবং লেখার দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। সেই উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি—সপ্তম শ্রেণীর বাংলা প্রবন্ধ রচনা, অষ্টম শ্রেণীর বাংলা রচনা, নবম শ্রেণীর প্রবন্ধ রচনা, মাধ্যমিক প্রবন্ধ রচনা— সবই এক জায়গায়।Info Educations-এর এই বিভাগে তোমরা সহজ ভাষায়, পরীক্ষায় উপযোগী এবং উচ্চমানের প্রবন্ধ পাবা। আশা করি এগুলি তোমাদের পড়াশোনায় অনেক সাহায্য করবে এবং পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে সহায়ক হবে। বাংলা প্রবন্ধ রচনা—শুধুমাত্র Info Educations-এ।


Class 7 Probondho Rochona Question & Answers

আজ আলোচনার বিষয় 5 টি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা সপ্তম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য -  ১.একটি চন্দ্রালোকিত রাতের অভিজ্ঞতা ২.একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা ৩.একটি শীতের দুপুরের অভিজ্ঞতা ৪.অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ৫.একটি গ্রামে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। 


১) একটি চন্দ্রালোকিত রাতের অভিজ্ঞতা : 

একটি চন্দ্রালোকিত রাত এমন এক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা, যা দীর্ঘদিন মনে গেঁথে থাকে। সেদিন ছিল পূর্ণিমা। বিকেলের শেষে আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকার হতে শুরু করতেই পূর্বদিগন্তে ফুটে উঠল উজ্জ্বল, গোলাকৃতি চাঁদ। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই চারদিক ছড়িয়ে পড়ল নরম, রুপালি আলো। মনে হচ্ছিল প্রকৃতি যেন নিজেকে অন্য রূপে সাজিয়ে তুলেছে।


আমি বাড়ির উঠোনে গিয়ে বসেছিলাম। আশেপাশের গাছপালা, ফুল, ঘাস—সবই চাঁদের আলোয় নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। বাতাস ছিল ঠান্ডা ও মৃদুমন্দ, তার ছোঁয়া মনকে গভীর প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিচ্ছিল। দূরে কোথাও ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর হালকা বাতাসের শব্দ মিলেমিশে এক অদ্ভুত সুর তৈরি করেছিল।


চাঁদের আলোয় গ্রামের নির্জন পথ যেন সাদা চাদরে মোড়া দেখাচ্ছিল। পুকুরের জলে চাঁদের প্রতিফলন এতটাই স্পষ্ট ছিল যে মনে হচ্ছিল সেখানে আরেকটি চাঁদ ভেসে আছে। সন্ধ্যার ব্যস্ততা কাটিয়ে মানুষজন ঘরে ফিরলেও প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্য যেন আমাকে চারদিকে ঘিরে রেখেছিল। এই নীরবতা ভয়ের নয়, বরং এক মধুর নিস্তব্ধতা, যা মনকে ভাবুক করে তোলে।


সেই চন্দ্রালোকিত রাতে আমি উপলব্ধি করেছি যে, প্রকৃতির সৌন্দর্য অনুভব করতে হলে কোলাহল থেকে একটু দূরে যাওয়া প্রয়োজন। চাঁদের আলো মানুষকে শুধু দৃশ্যমান সৌন্দর্যই দেয় না, তার সঙ্গে মনেও এনে দেয় শান্তি, স্বপ্ন এবং এক অনির্বচনীয় আনন্দের অনুভূতি। এ কারণেই সেই রাতটি আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন।


২.একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা : 

উত্তর : - একটি ঝড়ের রাত মানুষের মনে ভয়, উদ্বেগ ও প্রকৃতির শক্তির প্রতি এক গভীর উপলব্ধি তৈরি করে। এমনই এক ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা আজও আমার মনে鲜ভাবে রয়ে গেছে। সেদিন সন্ধ্যা থেকেই আকাশ ছিল অস্বাভাবিকভাবে অন্ধকার। দূরে দূরে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছিল, আর দমকা হাওয়ায় গাছের ডালপালা দুলছিল। মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি যেন আসন্ন বিপদের সংকেত দিচ্ছে।


রাত বাড়তেই ঝড় শুরু হলো। প্রথমে টুপটুপ করে বৃষ্টি নামল, তারপর হঠাৎই প্রবল বেগে জল পড়তে লাগল। মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে অন্ধকার নেমে এল। বিদ্যুতের আলো নিভে যাওয়ায় বাড়ির ভেতরে শুধু মোমবাতির ক্ষীণ আলো। বাইরে বাতাসের হাহাকার আর বজ্রপাতের তীব্র আলো-আঁধারি পরিবেশকে আরও ভয়ংকর করে তুলেছিল। জানালার কাঁচে বৃষ্টির থাপ্পড় আর ছাদের ওপর জলপতনের শব্দ যেন এক সঙ্গে মিলেমিশে এক অস্থির সুর সৃষ্টি করেছিল।


ঝড় এতটাই প্রবল ছিল যে আশপাশের বড় বড় গাছগুলো ঝুঁকে পড়ছিল। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, যেন বাড়িটাই কেঁপে উঠছে। তবে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে থাকায় ভয় কিছুটা কম লাগছিল। ঝড়ের তীব্রতা যেমন ছিল ভয়ঙ্কর, ঠিক তেমনই এর মাঝে প্রকৃতির অদ্ভুত শক্তির প্রকাশও লক্ষ করলাম।


কয়েক ঘণ্টা পরে ঝড় ধীরে ধীরে কমে এলে পরিবেশে তৈরি হলো এক অদ্ভুত নীরবতা। ভেজা মাটির গন্ধ আর ঠান্ডা বাতাস মনকে শান্ত করে দিল। সেই রাতে আমি উপলব্ধি করেছি—ঝড় ভয়ংকর হলেও প্রকৃতির এই রূপ আমাদের শেখায় সতর্ক থাকতে, আবার প্রতিটি শান্ত সকালকে আরও বেশি ভালোবাসতে।



৩.একটি শীতের দুপুরের অভিজ্ঞতা :

উত্তর : - একটি শীতের দুপুর প্রকৃতির এক বিশেষ উপহার। তীব্র শীতের সকালের কাঁপুনি কাটিয়ে দুপুরে যখন রোদ নরমভাবে নেমে আসে, তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এক অনন্য উষ্ণতা। এমনই এক শীতের দুপুরের অভিজ্ঞতা আমার আজও মনে জাগে।


সেদিন সকাল থেকেই কুয়াশা ঘন হয়ে ছিল। ঠান্ডা বাতাস বইছিল, হাত-পা জমে আসছিল। তবে দুপুরের দিকে আকাশ ধীরে ধীরে পরিষ্কার হলো। সূর্য দেখা দিতেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল কোমল, সোনালি রোদ। আমি বাড়ির উঠোনে দাদা-দিদিদের সঙ্গে খেজুর গুড়ের পিঠে খেতে খেতে রোদ পোহাচ্ছিলাম। রোদের ছোঁয়ায় শরীর উষ্ণ হয়ে উঠছিল, মনে হচ্ছিল যেন শীতের কষ্ট মুহূর্তেই উধাও।


গ্রামের মাঠে তাকিয়ে দেখলাম, কৃষকরা ধানের খেতে কাজ করছে। তাদের গায়ে মোটা শীতবস্ত্র থাকলেও দুপুরের রোদে কাজ করা সহজ হচ্ছিল। গাছের পাতায় জমে থাকা শিশির রোদে ঝিলমিল করছিল। পথের ধারে বসে থাকা বয়স্ক লোকেরা আলাপ করছিল; কেউ কেউ আগুন পোহাচ্ছিলেও রোদের মায়ায় সেদিকে কম মন দিচ্ছিল।


শীতের দুপুরের এমন পরিবেশ মনকে অদ্ভুত শান্তি দিল। গরম চা আর মুড়ি খেতে খেতে মনে হচ্ছিল সময় যেন একটু থেমে গেছে। চারদিকে ছিল অলস এক প্রশান্তি—না অতিরিক্ত শীত, না তীব্র গরম। শুধু আরাম আর সৌন্দর্যের নিঃশব্দ এক অনুভূতি।


সেই শীতের দুপুর আমাকে শিখিয়েছে—প্রকৃতির প্রতিটি ঋতুর নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। শীত যেমন কষ্ট দেয়, ঠিক তেমনি তার দুপুর নিয়ে আসে উষ্ণতা, শান্তি এবং নিঃশব্দ আনন্দের মুহূর্ত।


৪.অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা : 

উত্তর : - অরণ্য ভ্রমণ সবসময়ই এক রোমাঞ্চকর এবং স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির কোলের কাছে গিয়ে মানুষ যেন নিজের আসল সত্তাকেই নতুন করে খুঁজে পায়। এমনই এক অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আজও আমার মনে তাজা।


এক শীতের সকালে আমরা কয়েকজন বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা কাছের একটি অরণ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সূর্যের নরম আলো গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। অরণ্যে পা রাখা মাত্রই মনে হলো আমরা যেন এক নতুন পৃথিবীতে প্রবেশ করেছি। চারদিকে ছিল শুধু সবুজের সমারোহ, পাখির কিচিরমিচির এবং পাতার মর্মর শব্দ। হালকা বাতাসে অরণ্যের গন্ধ মনকে আরও সতেজ করে দিচ্ছিল।


আমরা ধীরে ধীরে ভিতরের দিকে এগোতে লাগলাম। মাঝে মাঝে দূরে হরিণের দৌড়ঝাঁপ আর বানরের ডাক শোনা যাচ্ছিল। অরণ্যের মাঝ বরাবর একটি ছোট নদী বয়ে যাচ্ছিল। তার স্বচ্ছ পানি পাথরের গায়ে আঘাত করে এক মধুর সুর সৃষ্টি করছিল। নদীর ধারে বসে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিই। সেই মুহূর্তে প্রকৃতির শান্ত সৌন্দর্য যেন মনকে জড়িয়ে ধরেছিল।


ভ্রমণের শেষে একটি উঁচু পাহাড়ি জায়গা থেকে অরণ্যের বিশাল বিস্তৃতি দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। সবুজের অসীম সমুদ্র যেন চোখে স্থির হয়ে রইল। এই অরণ্য ভ্রমণ আমাকে উপলব্ধি করিয়েছে—প্রকৃতি আমাদের শক্তি, শান্তি এবং জীবনের সত্যিকারের সৌন্দর্যকে অনুভব করতে শেখায়।


সেই দিনটি আজও স্মৃতিতে অমলিন, কারণ অরণ্যের নিঃশব্দ সৌন্দর্য আমাকে অশেষ আনন্দ ও প্রশান্তির অভিজ্ঞতা দিয়েছে।


৫.একটি গ্রামে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা : 

উত্তর : - গ্রাম ভ্রমণ সবসময়ই মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়, কারণ সেখানে প্রকৃতি ও মানুষের সরল জীবনযাপন এক অপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি করে। এমনই এক গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আজও আমার মনে উজ্জ্বল হয়ে আছে।


গত শীতের ছুটিতে আমি পরিবারের সঙ্গে মামাবাড়ির গ্রামে গিয়েছিলাম। শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে গ্রামের শান্ত পরিবেশে পৌঁছাতেই মন এক অদ্ভুত স্বস্তি পেল। চারদিকে ছিল সবুজ মাঠ, রোদ ঝলমলে আকাশ, আর পথের দুই পাশে খেজুর ও তাল গাছ। গ্রামের মাটির গন্ধ যেন আমাকে প্রথম মুহূর্তেই আপন করে নিল।


ভোরবেলা উঠেই দেখি কুয়াশার চাদরে মুড়ে আছে পুরো গ্রাম। কৃষকরা ধানক্ষেতে কাজ করছে, আর গরু-ছাগল চরাচ্ছে রাখালছেলেরা। দুপুরে ছোটদের সঙ্গে মাঠে ফুটবল খেললাম, পুকুরে মাছ ধরা দেখলাম, আর খেজুরের রসের স্বাদ নিতে গিয়ে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। গ্রামের মানুষদের সরলতা ও আন্তরিকতা হৃদয় ছুঁয়ে গেল। তারা যেন অতিথিকে পরিবারের সদস্যের মতোই আপন করে নেয়।


সন্ধ্যার সময় গ্রামের আকাশের অপরূপ সৌন্দর্য আমাকে অবাক করল। শহরের মতো এখানে আলো দূষণ নেই, তাই আকাশের তারারা আরও উজ্জ্বল মনে হচ্ছিল। রাতের নরম ঠান্ডা হাওয়া আর পোকামাকড়ের শব্দ এক অন্যরকম শান্তি এনে দেয়।


গ্রাম ভ্রমণের এই অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝিয়েছে—প্রকৃতির কাছে ফিরলে মন অনেকটা হালকা হয়ে যায়। গ্রামের সরল জীবন, মানুষের আন্তরিকতা এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন হয়ে রয়েছে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

Enter Your Comment

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)