পশ্চিমবঙ্গ বোর্ড ষষ্ঠ শ্রেণীর ভূগোল অষ্টম অধ্যায় বায়ুদূষণ Notes
WBBSE Class 6 Geography Chapter 8 বায়ুদূষণ সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণীর ভূগোল অষ্টম অধ্যায় বায়ুদূষণ Notes, ষষ্ঠ শ্রেণীর ভূগোল বায়ু দূষণ প্রশ্ন উত্তর, WBBSE Class 6 Geography Chapter 8 Question Answer in Bengali, ষষ্ট শ্রেণীর ভূগোল - অষ্টম অধ্যায় বায়ুদূষণ, এবং West Bengal Board Class 6 Geography (ভূগোল) Textbook Solution Chapter 8 বায়ুদূষণ — এই সমস্ত কীওয়ার্ডকে ভিত্তি করে এখানে পরিবেশ ও বায়ুদূষণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, সংজ্ঞা, কারণ, প্রভাব ও পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এই অধ্যায়টি বায়ুর গঠন, দূষণের উৎস এবং প্রতিকার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গঠনে বিশেষভাবে সহায়ক।
ষষ্ট শ্রেণীর ভূগোল - অষ্টম অধ্যায় বায়ুদূষণ Notes
1. বায়ুদূষণ কাকে বলে ?
উত্তর : - বায়ুর স্বাভাবিক উপাদানে ধোঁয়া, ধূলিকণা, বিষাক্ত গ্যাস, রাসায়নিক বা জীবাণুর মতো ক্ষতিকারক পদার্থ মিশে বায়ুর গুণমান নষ্ট হলে তাকে বায়ুদূষণ বলে। এটি মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
2. জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কত সালে বিস্ফোরণ ঘটেছিল?
উত্তর : - ২০১১ সালে জাপানের ফুকুসিমায় পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্ৰে বিস্ফোরণ ঘটে। তার ফলে প্রচুর পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাসে মিশে বায়ু দূষণ ঘটায় ৷
3. বাতাস কি কি ভাবে দূষিত হয় ?
উত্তর : বিভিন্ন প্রকার বিষাক্ত গ্যাস (যেমন—কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন- অক্সাইড (NOx), সালফার ডাইঅক্সাইড (SO,) ইত্যাদি), রাসায়নিক পদার্থ (সিসা, ক্লোরোফ্লুওরোকার্বন), যানবাহনের ধোঁয়া, ধূলিকণা, জৈবপদার্থ বাতাসে মিশলে বাতাস দূষিত হয় ৷
4. বায়ুদূষণের কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর : -
১. যানবাহনের ধোঁয়া – গাড়ি, বাস, ট্রাক ইত্যাদি চলার ফলে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও ক্ষুদ্র কণা নির্গত হয়।
২. কারখানা ও শিল্পের ধোঁয়া – কয়লা/ডিজেল পোড়ানো ও শিল্পক্রিয়ায় ক্ষতিকর গ্যাস বের হয়।
৩. জৈব জ্বালানির দহন – কাঠ, কয়লা, কেরোসিন ইত্যাদি পোড়ালে ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়।
৪. পোড়া আবর্জনা – প্লাস্টিক/পলিথিন বা অন্যান্য বর্জ্য পোড়ালে তীব্র দূষণ ঘটে।
৫. কৃষিকাজে রাসায়নিক ব্যবহার – কীটনাশক/সারের স্প্রে থেকে বায়ুতে রাসায়নিক মিশে যেতে পারে।
৬. নির্মাণ কাজের ধুলো – নির্মাণ ও রাস্তা মেরামতের ফলে কণাদূষণ বৃদ্ধি পায়।
৭. খনি ও পাথর ভাঙা – এসব কাজের ধুলো বায়ুকে দূষিত করে।
৮. গাছ কাটা (Deforestation / গাছপালা হ্রাস) – গাছ কমলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড শোষণ কমে যায়, মৃত বা কম গাছ থাকা এলাকায় মাটি ও ধুলো উড়ে বায়ুদূষণ বেড়ে যায়; পাশাপাশি গাছপালা কমলে শহরের তাপমাত্রা বাড়ে ও দূষণের ঘনত্ব বাড়তে পারে।
৯. প্রাকৃতিক কারণ – আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি বুষ্প, বনানলে আগুন ইত্যাদি প্রাকৃতিক উৎসও দায়ী।
5. বায়ুদূষণের ফলাফল উল্লেখ করো।
উত্তর : -
১. রোগ: বায়ু দূষণের ফলে মানুষের মধ্যে বেশ কিছু শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দশকে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঘটনা বেড়েছে। দূষিত এলাকার কাছাকাছি বসবাসকারী শিশুরা নিউমোনিয়া এবং হাঁপানিতে বেশি আক্রান্ত হয়। বায়ু দূষণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবে প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়।
২. গ্লোবাল ওয়ার্মিং: গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে বায়ুর গ্যাসীয় গঠনে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রার এই বৃদ্ধি গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে পরিচিত। এর ফলে হিমবাহ গলছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
৩. অ্যাসিড বৃষ্টি: জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে বাতাসে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং সালফার অক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত হয়। জলের ফোঁটাগুলি এই দূষকগুলির সাথে একত্রিত হয়, অম্লীয় হয়ে যায় এবং অ্যাসিড বৃষ্টিতে পড়ে যা মানুষ, প্রাণী এবং উদ্ভিদের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৪. ওজোন স্তরের ক্ষয়: বায়ুমণ্ডলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, হ্যালন এবং হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন নিঃসরণ ওজোন স্তরের ক্ষয়ের প্রধান কারণ। ক্ষয়প্রাপ্ত ওজোন স্তর সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধ করে না এবং মানুষের মধ্যে চর্মরোগ এবং চোখের সমস্যা সৃষ্টি করে।
৫. প্রাণীদের উপর প্রভাব: বায়ু দূষণকারীরা জলাশয়ে স্থগিত হয়ে জলজ জীবনকে প্রভাবিত করে। দূষণ প্রাণীদের তাদের বাসস্থান ছেড়ে নতুন জায়গায় যেতে বাধ্য করে। এটি তাদের বিপথগামী করে এবং বিপুল সংখ্যক প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্তির দিকে পরিচালিত করে।
6. বায়ুদূষণ প্রতিকারের উপায় লেখো।
উত্তর : - বায়ুদূষণ প্রতিকারের উপায়
১. গাছপালা রোপণ ও সংরক্ষণ – বেশি বেশি গাছ লাগানো এবং বনভূমি ধ্বংস রোধ করা।
২. পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার – সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, LPG ইত্যাদি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করা।
৩. যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ – যানবাহনে পলিউশন চেক করা, ইলেকট্রিক/সিএনজি গাড়ি ব্যবহার বাড়ানো।
৪. কারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ – শিল্প কারখানায় চিমনিতে ফিল্টার ও স্ক্রাবার লাগানো, দূষণমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার।
৫. আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ – প্লাস্টিক, জঞ্জাল বা পাতা পোড়ানো নিষিদ্ধ করা ও সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা।
৬. নির্মাণ কাজের ধুলো নিয়ন্ত্রণ – নির্মাণস্থানে পর্দা ব্যবহার, জল ছিটিয়ে ধুলো কমানো।
৭. কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার কমানো – কৃষিকাজে জৈব সার ও বায়ো-কীটনাশক ব্যবহার।
৮. জনসচেতনতা বৃদ্ধি – পরিবেশ সম্পর্কে স্কুল, কলেজ ও সমাজে সচেতনতা বাড়ানো।
৯. সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও আইন প্রয়োগ – দূষণ বিরোধী আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।
১০. সাইকেল ও গণপরিবহন ব্যবহার – ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে দূষণ হ্রাস করা।
7. টীকা লেখো - Earth Hour।
উত্তর : - Earth Hour হলো বিশ্বব্যাপী পালন করা একটি পরিবেশ সচেতনতা দিবস। প্রতি বছর মার্চ মাসের শেষ শনিবার পৃথিবীর মানুষ রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এক ঘণ্টার জন্য অপ্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক আলো ও ইলেকট্রনিক যন্ত্র বন্ধ রাখে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো—
(১) জ্বালানি অপচয় রোধ করা,
(২) পরিবেশ দূষণ কমানো, এবং
(৩) জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এটি প্রথম শুরু হয় ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে, পরে সারা বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশে পালন করা হচ্ছে। Earth Hour আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অল্প প্রচেষ্টায়ও আমরা পৃথিবীর শক্তি সঞ্চয় ও পরিবেশ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারি।


Enter Your Comment